আমাদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড বিভিন্ন ধরনের ভুলত্রুটি দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম সাধারণ ভুল হলো পিতা বা মাতার নামের ভুল। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নামের আংশিক ভুল রয়েছে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে পুরো নামই ভিন্ন।
এই ধরনের ভুল থাকলে কিভাবে সংশোধনের জন্য আবেদন করবেন, কী কী ডকুমেন্টস লাগবে, এবং কতদিন সময় লাগবে আজকের এই লেখায় আমরা বিস্তারিত জানবো।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আপনি নিচের যেকোনো কারণে আবেদন করতে পারেন:
- নামের বানান ভুল
- জন্মতারিখ ভুল
- পিতামাতা বা স্বামী/স্ত্রীর নাম ভুল
- ঠিকানা বা এলাকা পরিবর্তন
- পেশা বা শিক্ষাগত যোগ্যতা সংশোধন
- ছবি অস্পষ্ট বা পুরনো
পিতা-মাতার নামের আংশিক ভুল থাকলে করণীয়
আংশিক ভুল বলতে বোঝায় নামের আগে-পরে সমস্যা, স্পেলিং ভুল, বা আংশিকভাবে ভুল লেখা নাম । যেমন: নামটি “আব্দুল জব্বার” হওয়ার কথা, কিন্তু হয়েছে “আব্দুল জব্বর”।
এই আংশিক ভুল সংশোধনের জন্য আপনাকে নিচের ডকুমেন্টস গুলো সংগ্রহ করতে হবে:
যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে:
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের কপি (PSC/JSC/SSC/HSC/স্নাতক/স্নাতকোত্তর)
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম সনদ / পাসপোর্ট (যদি এনআইডি না থাকে)
- ভাই/বোনের এনআইডি / জন্মসনদ / শিক্ষা সনদের কপি
যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই:
- নিজের অনলাইন জন্ম সনদ
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র / জন্মসনদ / পাসপোর্ট (যদি থাকে)
- পিতার মৃত্যু সনদ (যদি প্রয়োগ হয়), না থাকলে চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র
- ভাই/বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র / জন্মসনদ
পিতা-মাতার নামের সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে চাইলে
যদি আপনি পিতা বা মাতার নাম সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করতে চান, যেমন পিতার নাম আগে ছিল “আব্দুল জব্বার” এখন করতে চান “আব্দুল লতিফ”, তাহলে এটি জটিল একটি প্রক্রিয়া। এ জন্য আপনাকে ভারী ও নির্ভরযোগ্য ডকুমেন্ট দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দেয়।
অনলাইনে সংশোধনের আবেদন করার পদ্ধতি
- প্রথমে ভিজিট করুন: services.nidw.gov.bd
- আপনার যদি আগে রেজিস্ট্রেশন করা থাকে, তাহলে লগইন করুন।
- না থাকলে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
- আবেদন ফর্ম পূরণ করুন এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস PDF আকারে আপলোড করুন (প্রতি ফাইল ২ এমবির নিচে রাখতে হবে)।
- ফি পরিশোধ করুন – প্রথমবার সংশোধনের জন্য সরকারি ফি: ৳230 + 6৳ চার্জ = মোট 236৳।
- বিকাশ, রকেট অথবা অন্যান্য মাধ্যমে পেমেন্ট করা যাবে।
কতদিন সময় লাগে?
- আংশিক সংশোধনের ক্ষেত্রে সাধারণত ২–৩ সপ্তাহের মধ্যে ১০৫ নম্বর থেকে SMS আসে: “আপনার আবেদন অনুমোদন হয়েছে”।
- সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগতে পারে — ২ সপ্তাহ থেকে ১ মাস বা তার বেশি।
আবেদন করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
- সংশোধনের কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন
- সঠিক ডকুমেন্ট সংযুক্ত করুন
- সকল তথ্য বাংলায় এবং নির্ভুলভাবে দিন
- মোবাইল নম্বর ও ইমেইল সঠিক দিন
- আবেদন সাবমিটের পর রেফারেন্স নম্বর সংরক্ষণ করুন
কত দিনে ভোটার আইডি সংশোধন হয়?
আবেদন করার পর সাধারণত ১৫-৩০ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে জটিলতার কারণে বেশি সময়ও লাগতে পারে।
মোবাইল থেকে কীভাবে আবেদন করবেন?
আপনি মোবাইল ফোনের ব্রাউজার ব্যবহার করে অনলাইন NID ওয়েবসাইটে গিয়ে সহজেই আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে NID সেবা মোবাইল অ্যাপেও আসতে পারে ভবিষ্যতে।
উপসংহার
ভোটার আইডি কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাই কোনো ভুল থাকলে দেরি না করে অনলাইনে বা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশোধনের আবেদন করুন। সঠিক তথ্য নিশ্চিত করলে সরকারি সেবা গ্রহণ আরও সহজ হয়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQ)
প্রশ্ন ১: ভোটার আইডি কার্ডে ভুল থাকলে কীভাবে সংশোধন করবো?
উত্তর: অনলাইনে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে লগইন করে “তথ্য সংশোধন” অপশন থেকে আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করে নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
প্রশ্ন ২: ভোটার আইডি সংশোধনের জন্য কী কী কাগজপত্র লাগবে?
উত্তর: জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, সঠিক তথ্য প্রমাণে জন্ম সনদ/শিক্ষাগত সনদ/নিকার কপি এবং ছবি প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ৩: কতদিনে সংশোধিত ভোটার আইডি পাওয়া যায়?
উত্তর: সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধিত তথ্য আপডেট হয় এবং আইডি ডাউনলোড করা যায়।
প্রশ্ন ৪: সংশোধনের জন্য কত টাকা ফি দিতে হয়?
উত্তর: তথ্যভেদে ফি ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত নাম, জন্মতারিখ ইত্যাদি বড় ধরনের তথ্য পরিবর্তনে ফি ২৩০ টাকা হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: কোথায় গেলে ভোটার আইডি সংশোধনের সহায়তা পাওয়া যাবে?
উত্তর: উপজেলা নির্বাচন অফিস বা সহায়তা কেন্দ্রে সরাসরি যোগাযোগ করলে সংশোধন বিষয়ে সহায়তা পাবেন।