ভোটার এলাকা পরিবর্তনের নিয়ম ২০২৫

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের নিয়ম ২০২৫

আসসালামু আলাইকুম।
আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সকলের জন্য সহজ ও কল্যাণময় জীবন বরাদ্দ করেন—এই প্রার্থনা ও শুভ কামনা জানিয়ে শুরু করছি আজকের তথ্যভিত্তিক গাইডটি।

অনেকেই আছেন, যারা এনআইডি কার্ডে ঠিকানা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলেও বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। কেউ কেউ ভাবেন, এটা বুঝি খুব জটিল প্রক্রিয়া। কেউ আবার জানেন না, এনআইডি কার্ডে আসলে দুই ধরনের ঠিকানা থাকে—বর্তমান ঠিকানাস্থায়ী ঠিকানা

এই লেখাটির উদ্দেশ্য হলো, বর্তমান ঠিকানা, অর্থাৎ আপনি যেখানে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত রয়েছেন, সেই ভোটার এলাকা কীভাবে পরিবর্তন করবেন, তার পুরো প্রক্রিয়াটি সহজভাবে উপস্থাপন করা।

এনআইডি কার্ডের বর্তমান ঠিকানা বলতে কী বোঝায়?

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) পেছনে যে ঠিকানাটি উল্লেখ থাকে, সেটিই মূলত আপনার বর্তমান ঠিকানা। এই ঠিকানার ভিত্তিতে আপনি নির্দিষ্ট একটি ভোটার এলাকায় ভোট প্রদান করতে পারবেন।

তবে আপনি যদি নতুন কোনো এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানেই ভোট দিতে চান, তাহলে বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করে ভোটার এলাকা হালনাগাদ করতে হবে।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন কী?

ভোটার এলাকা পরিবর্তন হলো- আপনার পূর্বের ভোটার ঠিকানা পরিবর্তন করে নতুন এলাকার আওতায় আসা এবং সেই এলাকার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া। এটি সাধারণত চাকরি, পড়াশোনা বা বিবাহজনিত কারণে প্রয়োজন হয়। এই কাজটি করতে ফর্ম-১৩ পূরণ করে নির্ধারিত কাগজপত্রসহ উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হয়।

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের নিয়ম

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে ফর্ম-১৩ সংগ্রহ করে তা পূরণ করতে হবে। এরপর ফর্মের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে নিজে উপস্থিত হয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন জমা দিতে হয়। বর্তমানে এই প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো নির্ধারিত ফি নেই। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সাধারণত ৭ থেকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ধরুন আপনি আগের ঠিকানা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে অন্য এলাকায় স্থায়ী হয়েছেন। এখন আপনি যদি নতুন এলাকার নাগরিক সুবিধা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চান, তাহলে নতুন ঠিকানাকেই জাতীয় পরিচয়পত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এর মাধ্যমে:

  • আপনি নতুন এলাকার ভোটার হবেন
  • সরকারি সেবা গ্রহণে জটিলতা কমবে
  • পরিচয়পত্রে তথ্য হালনাগাদ থাকবে

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  • নতুন ঠিকানার ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি/ভাড়া চুক্তি)
  • নাগরিক সনদ
  • প্রত্যয়নপত্র
  • বাড়িওয়ালার অনুমতিপত্র (ভাড়াটিয়া হলে)

ফর্মটি কোথায় পাবেন?

এই ফর্মটি আপনি যেকোনো উপজেলা বা সিটি নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া অনেক সময় কাছাকাছি কোনো কম্পিউটার দোকান থেকেও সংগ্রহ করা যায়।

ফর্মের লিংক ফর্ম নম্বর ১৩ (ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফর্ম)

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য ফরম-১৩ পূরণের নিয়ম

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ফরম-১৩ পূরণ করতে হয়। এটি “ভোটার তথ্য হালনাগাদ বা স্থানান্তরের আবেদন ফর্ম” হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিচে প্রতিটি ঘর পূরণের সহজ নির্দেশনা দেওয়া হলো:

ফরম-১৩ পূরণের ধাপসমূহ:

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য ফরম-১৩ পূরণের নিয়ম

আবেদনকারীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম – বাংলা ও ইংরেজিতে লিখুন।

জন্ম তারিখ ও NID নম্বর – সঠিকভাবে লিখতে হবে।

পূর্বের ঠিকানা ও ভোটার এলাকা – যেখানে আপনি আগে ছিলেন।

বর্তমান ঠিকানা ও ভোটার এলাকা – যেখানে আপনি এখন স্থায়ীভাবে থাকছেন।

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের কারণ – যেমন, চাকরি, শিক্ষা, বিয়ে, বাসস্থান পরিবর্তন ইত্যাদি।

আপনার স্বাক্ষর ও তারিখ – ফর্মের নিচে।

প্রত্যয়নকারী কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ও সীল – যেমন, স্থানীয় চেয়ারম্যান/মেম্বার বা পৌর কাউন্সিলর।

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের ধাপসমূহ

ধাপ ১: ফর্ম-১৩ সংগ্রহ করুন

nidw.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করুন

অথবা সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করুন

ধাপ ১ঃ ফর্ম পূরণ করুন

বর্তমান ও পূর্বের ঠিকানা লিখুন

স্থানান্তরের কারণ (চাকরি, পড়াশোনা, বিয়ে) উল্লেখ করুন

স্বাক্ষর ও মোবাইল নম্বর দিন

ধাপ ২ঃ কাগজপত্র সংযুক্ত করুন

NID, ইউটিলিটি বিল, নাগরিক সনদ, ছবি এবং অনুমতিপত্র (যদি প্রয়োজন হয়) ফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করুন

ধাপ ৩ঃ আবেদন জমা দিন

নিজ হাতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিন

রিসিপ্ট সংগ্রহ করুন

ধাপ ৪ঃ যাচাই ও অনুমোদন

অফিসার কাগজপত্র যাচাই করবেন

জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর ও সিল থাকতে হবে

যাচাই শেষে আপনার ভোটার এলাকা পরিবর্তন অনুমোদন হবে

কতদিনে পরিবর্তন সম্পন্ন হয়?

সাধারণত ৭ থেকে ১৫ কর্মদিবস লাগে

মাঝে মাঝে নির্বাচন অফিসের ব্যস্ততার কারণে সর্বোচ্চ ৩০ দিন সময় লাগতে পারে

অনলাইনে আবেদন করা যায়?

না, কেবল ফর্ম-১৩ অনলাইনে ডাউনলোড করা যায়। আবেদন করতে হলে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হয়।

উপসংহার

ভোটার এলাকা পরিবর্তন একটি সহজ প্রক্রিয়া হলেও এটি আপনার নাগরিক অধিকার প্রয়োগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছি, এবং আপনারাও পারবেন। কেবল সঠিকভাবে ফর্ম পূরণ, কাগজপত্র সংযুক্ত করা ও অফিসে জমা দেওয়াই যথেষ্ট।

তথ্যটি যদি আপনার কাজে আসে, তবে এটি শেয়ার করুন যাতে অন্যরাও উপকৃত হতে পারে। সঠিক নাগরিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য

সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য ফি দিতে হয় কি?

না, বর্তমানে এই প্রক্রিয়ার জন্য কোনো নির্ধারিত ফি নেই।

আবেদনকারীর উপস্থিতি কি বাধ্যতামূলক?

হ্যাঁ, আবেদন নিজেই করতে হবে।

People Also Search For:

ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ pdf download

অনলাইনে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের নিয়ম

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কতদিন সময় লাগে

ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ফর্ম-১৩

ভোটার এলাকা পরিবর্তন অনলাইন স্ট্যাটাস চেক

Rasel Ahmed Suja

আমি Nagoriktottho.com-এর প্রতিষ্ঠাতা। পেশাগতভাবে একজন কন্টেন্ট রাইটার, SEO এক্সপার্ট ও ওয়েব ডেভেলপার। পাশাপাশি, ইউনিয়ন পরিষদের চাকরির মাধ্যমে জনগণের সেবায় কাজ করছি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক তথ্য সহজে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।

Rasel Ahmed Suja

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Review Your Cart
0
Add Coupon Code
Subtotal