বাংলাদেশ সরকার অতি দরিদ্র ও অসহায় নারীদের জন্য যে একটি বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেছে সেটি হলো ভিজিডি কার্ড বা Vulnerable Group Development Card। ২০২৫ সালের জন্য ভিজিডি কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া এখন অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে, ফলে এখন আর ইউনিয়ন পরিষদে না গিয়েই ঘরে বসে অনলাইন আবেদন করা সম্ভব।
এই আর্টিকেলে আপনি জানবেন
- ভিজিডি কার্ড কী
- কে কে আবেদন করতে পারবেন
- অনলাইন আবেদন করার ধাপসমূহ
- গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ও পরামর্শ
VGD Card হলো বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, যা অতি দরিদ্র নারীদের খাদ্য সহায়তা, আত্মনির্ভরশীলতা এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেয়া হয়।
কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়?
- প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল
- স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ
- জীবনদক্ষতা এবং আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ
- সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা
ভিজিডি কার্ডের জন্য যোগ্যতা
- নারী হতে হবে এবং বয়স হতে হবে ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে
- ভূমিহীন বা ০.১৫ একরের কম জমির মালিক
- পরিবারের স্থায়ী আয়ের উৎস না থাকা
- পরিবারের কোন উপার্জনক্ষম সদস্য না থাকা
- জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মতারিখ বাধ্যতামূলক
ভিজিডি কার্ড অনলাইন আবেদন ২০২৫
২০২৫ সাল থেকে ভিজিডি (Vulnerable Group Development) কার্ডের জন্য অনলাইন আবেদন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এখন ঘরে বসে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে যে কেউ, বিশেষ করে অতি দরিদ্র নারীরা, সহজেই আবেদন করতে পারবেন। এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে জানাবো কীভাবে আবেদন করবেন, কী কী তথ্য লাগবে, কোন ওয়েবসাইটে যেতে হবে, এবং কীভাবে পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করবেন।
টিপস: কখন আবেদন করবেন?
বর্তমানে সার্ভার সমস্যা থাকার কারণে দিনের বেলা আবেদন সম্পূর্ণ না হলে রাতের দিকে চেষ্টা করুন। রাত ১১টার পর অনেক সময় সার্ভার ঠিকভাবে কাজ করে।
ভিজিডি কার্ড অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম ২০২৫
ধাপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে এই লিংকে প্রবেশ করুন: dwavwb.gov.bd/icvgd/external-user-otp
ধাপ ২: মোবাইল নম্বর যাচাই ও OTP গ্রহণ
- মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মতারিখ দিন।
- একটি OTP কোড আসবে, সেটি দিয়ে যাচাই করুন।
ধাপ ৩: আবেদন ফর্ম পূরণ
ব্যক্তিগত তথ্য:
- নাম (বাংলা ও ইংরেজি), পিতা/মাতার নাম, অভিভাবকের নাম, জন্ম তারিখ, এনআইডি নম্বর, ধর্ম, বৈবাহিক অবস্থা, ছবি।
যোগাযোগের তথ্য:
- বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম, ডাকঘর, বাড়ির ঠিকানা। স্থায়ী ঠিকানা আলাদা হলে সেটিও দিন।
অতিরিক্ত তথ্য:
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা, আয়ের উৎস, বৈদ্যুতিক সুবিধা, নিজস্ব টিউবওয়েল, কিশোরী মেয়ে আছে কিনা, প্রতিবন্ধী সদস্য, এসিড সারভাইভার, জমির মালিকানা ইত্যাদি তথ্য দিন।
ধাপ ৩: সংরক্ষণ ও আবেদন সম্পন্ন
- ফর্ম পূরণের পরে সব তথ্য যাচাই করুন।
- “সংরক্ষণ” বাটনে ক্লিক করুন।
- সফল আবেদন হলে অভিনন্দন বার্তা দেখাবে।
ভিজিডি কার্ডের জন্য আবেদন কোথায় ও কিভাবে করবো?
১. সরাসরি আবেদন (অফলাইন):
- ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন
- প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করুন
- মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে জমা দিন
২. অনলাইন আবেদন (যদি প্রযোজ্য হয়):
- mygov.bd-তে লগইন করুন (যদি সেবা যুক্ত থাকে)
- “ভিজিডি কার্ড” সার্ভিস সিলেক্ট করুন
- প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে সাবমিট করুন
ভিজিডি কার্ডের চাল কবে বিতরণ করা হয়?
প্রতি মাসে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে একদিন নির্ধারণ করে চাল বিতরণ করা হয়। তালিকাভুক্ত নারীদের মোবাইলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
ভিজিডি কার্ডের জন্য কোনো টাকা লাগে কি?
না, এই ভিজিডি কার্ডের জন্য কোন প্রকার টাকা লাগে না। যদি কেউ এই সেবার জন্য টাকা দাবি করে, তাহলে আপনার নিকটস্থ প্রশাসনিক দপ্তরে অভিযোগ করুন।
ভিজিডি কার্ডের তালিকা কীভাবে দেখবো?
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে প্রকাশিত তালিকায় নাম খুঁজে দেখতে পারো। কিছু এলাকায় ডিজিটাল পোর্টালে তালিকা প্রকাশ করা হয়।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আমি নিজে ২০২৪ সালে একজন আত্মীয়ার ভিজিডি কার্ডের অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করেছি।
সার্ভারে চাপ থাকায় আমরা রাতে আবেদন করে সফলভাবে আবেদন সাবমিট করতে পেরেছিলাম। আবেদন করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সঠিক জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, মোবাইল নাম্বার এবং ছবি আপলোড।
অনেক সময় ফর্ম পূরণের সময় ভুল ঠিকানা বা নামের বানান ভুল হয়, যা পরবর্তীতে আবেদন বাতিলের কারণ হতে পারে। তাই সাবধানে ও মনোযোগ দিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করা জরুরি।
উপসংহার:
বন্ধুরা, যারা অতি দরিদ্র নারী এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক সুবিধা পেতে চান, তাদের জন্য ভিজিডি কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। এই আর্টিকেলের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আপনার মা, বোন, বা প্রতিবেশী যদি এই ধরনের সুযোগ পাওয়ার যোগ্য হন, তাহলে তাদেরকেও এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানান।
ভিজিডি কার্ড FAQ (সচরাচর জিজ্ঞাসা)
১. ভিজিডি কার্ডের মেয়াদ কতদিন?
প্রতিটি ভিজিডি কার্ডের মেয়াদ সাধারণত ২ বছর।
২. VWB ও VGD-এর পার্থক্য কী?
VWB ছিল পুরনো প্রকল্পের নাম, বর্তমানে VGD চালু আছে। উভয়ই খাদ্য সহায়তা প্রোগ্রাম।
৩.VWB কী? (VWB meaning in BD)
VWB মানে হলো Vulnerable Group Feeding – এটি ভিজিডি প্রোগ্রামের মতোই একটি সরকার পরিচালিত খাদ্য সহায়তা প্রকল্প। এটি একসময় চালু ছিল, তবে এখন VGD প্রোগ্রাম চালু আছে।
ভিজিডি কার্ডের মেয়াদ কতদিন?
প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল, প্রশিক্ষণ সুবিধা (যেমন: সেলাই, পোলট্রি, মৎস্যচাষ) এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের সুযোগ মেলে।