বাংলাদেশে এখন ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করে অবিবাহিত সনদ (Unmarried Certificate) পাওয়া যায়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ডকুমেন্ট, যা আপনার বৈবাহিক অবস্থা প্রমাণ করে। চাকরির আবেদন, ভিসা আবেদন, পাসপোর্ট তৈরি, বিদেশে পড়াশোনা বা কাজের জন্য আবেদন, এমনকি অনেক সামাজিক ও আইনি কাজেও এটি দরকার হয়।
অবিবাহিত সনদ হল এমন একটি প্রত্যয়নপত্র যা সরকারিভাবে নিশ্চিত করে যে আপনি এখনও বিবাহিত নন। এটি আপনার নাগরিক অবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং অনেক দেশে বা প্রতিষ্ঠানে এটি জমা দিতে হয়।
কেন এই আর্টিকেলটি পড়বেন?
আপনি যদি সচেতন নাগরিক হন এবং নিজের অবিবাহিত সনদের আবেদন নিজেই করতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এখানে আপনি জানতে পারবেন:
- কোথায় আবেদন করবেন
- কীভাবে আবেদন করবেন
- কী ডকুমেন্ট লাগবে
- কত টাকা ফি
- কতদিন সময় লাগবে এবং
- কোন ধাপে কী করতে হবে।
কোথায় এবং কীভাবে আবেদন করবেন?
বাংলাদেশ সরকারের pratoyon.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এখন খুব সহজে অনলাইনে আবেদন করা যায়। প্রথমে নাগরিক অ্যাকাউন্ট খুলে ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে। এরপর সেবা সমূহ থেকে “অবিবাহিত সনদ” নির্বাচন করে আবেদন সম্পন্ন করা যাবে।
আপনি মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে খুব সহজেই এটি করতে পারেন, কোনো দালাল বা অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই।
অবিবাহিত সনদ করতে কি কি কাগজপত্র লাগে
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- জন্ম নিবন্ধন সনদ (Birth Certificate)
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- বাবা/মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি চাওয়া হয়)
- স্থানীয় চেয়ারম্যান/কাউন্সিলরের সুপারিশ (যদি প্রয়োজন হয়)
অবিবাহিত সনদ আবেদন করার ধাপসমূহ
চলুন আমরা জেনে নিই কিভাবে অনলাইনে অবিবাহিত সনদের জন্য আবেদন করবেন। প্রতিটি ধাপে আপনাকে সহজভাবে বোঝানো হবে- কোন ধাপে কী করবেন এবং সম্পূর্ণ প্রসেসটি কীভাবে সম্পন্ন হবে:
ধাপ ১: নাগরিক একাউন্ট তৈরি করুন

প্রথমেই আপনাকে prottoyon.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি নাগরিক একাউন্ট খুলতে হবে।
একাউন্ট খোলার সময় নিচের তথ্যগুলো সঠিকভাবে দিতে হবে:
- নাম
- পিতার নাম
- ঠিকানা
- ছবি
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর
একাউন্ট খোলার পর সেটি ১০০% সম্পূর্ণ করতে হবে, তবেই আপনি আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: নাগরিক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও ধাপসমূহ ২০২৫
ধাপ ২: প্রত্যয়ন ওয়েবসাইটে লগইন করুন

এখন prottoyon.gov.bd ওয়েবসাইটে লগইন করুন।
লগইন করার জন্য:
যে মোবাইল নম্বর দিয়ে নাগরিক প্রোফাইল তৈরি করেছিলেন, সেটি ব্যবহার করুন।
প্রোফাইল তৈরি করার সময় যে OTP (ওটিপি) আপনার মোবাইলে এসেছিল, সেটিই আপনার পাসওয়ার্ড হিসেবে কাজ করবে।
ধাপ ৩: ড্যাশবোর্ড থেকে অবিবাহিত সনদ নির্বাচন করুন

প্রত্যয়ন ওয়েবসাইটে লগইন করার পর ড্যাশবোর্ড অপশনে ক্লিক করুন।
সেবা সমূহ থেকে অবিবাহিত সনদ নির্বাচন করুন।
সেখানে আবেদন করার আগে কী কী তথ্য প্রয়োজন, তার তালিকা দেখতে পাবেন (যেমন: আবেদনকারীর তথ্য, পরিচয়পত্র নম্বর, ছবি ইত্যাদি)।
ধাপ ৪: আবেদন করুন

এই ধাপে “আবেদন করুন” অপশনে ক্লিক করুন।
আপনার অবিবাহিত সনদের জন্য যেসব তথ্য ও ডকুমেন্ট প্রয়োজন, তার একটি তালিকা দেখানো হবে – ভালো করে পড়ে নিশ্চিত হয়ে তারপর “আবেদন করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫ : তথ্য হালনাগাদ

এই অপশনে আপনার তথ্য হালনাগাদ দেখানো হবে — যেমন: নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি।
যদি সব তথ্য সঠিক থাকে, তাহলে “সব ঠিক আছে” অপশনে ক্লিক করুন।
আর যদি কোনো তথ্য পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে “পরিবর্তন” অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৬ : পেমেন্ট ও ভাষা নির্বাচন
এই ধাপে অবিবাহিত সনদের জন্য অনলাইনে পেমেন্ট করতে হবে এবং ভাষা নির্বাচন করতে হবে। আপনি কোন ভাষায় সনদটি নিতে চান, তা ঠিক করুন — যেমন বাংলা বা ইংরেজি।

যদি দুটি ভাষা (বাংলা ও ইংরেজি) নির্বাচন করেন, খরচ হবে ৩১ টাকা।
যদি শুধু এক ভাষা নির্বাচন করেন, খরচ হবে ১৫ টাকা।
পেমেন্ট করতে পারবেন বিকাশ, নগদ, রকেট বা ব্যাংকিং পদ্ধতিতে।
এরপর আপনাকে ঠিকানার ধরণ এবং অফিস নির্বাচন করতে হবে।
ধাপ ৭ : আবেদন আইডি সংরক্ষণ ও জমা
অনলাইনে পেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর আপনার আবেদন আইডি দেখানো হবে।
আবেদন আইডিটি অবশ্যই সংরক্ষণ করে রাখুন।
এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যেমন: পরিচয়পত্র, ছবি, সম্পর্ক প্রমাণ ইত্যাদি) হাতে নিয়ে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আমি নিজেই ২০২৪ সালে অবিবাহিত সনদ অনলাইনে আবেদন করেছিলাম। প্রথমে নাগরিক একাউন্ট খোলা নিয়ে কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল, কিন্তু ওয়েবসাইটের নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ে নিলে খুব দ্রুতই সব কিছু হয়ে যায়। আবেদন জমা দেওয়ার ৮ দিনের মাথায় ডাকযোগে সনদ হাতে পাবেন।
উপসংহার
অবিবাহিত সনদ অনলাইনে আবেদন এখন আর কঠিন নয়। শুধু prottoyon.gov.bd ওয়েবসাইটে ধাপে ধাপে আবেদন করলে সহজেই সনদ হাতে পাবেন। এতে সময় ও খরচ দুটোই বাঁচবে।
প্রশ্ন-উত্তর (FAQ)
প্রশ্ন: অবিবাহিত সনদ কোথায় দরকার?
উত্তর: বিদেশ ভিসা, চাকরি, শিক্ষাগত কাজ, বিবাহ নিবন্ধনে।
প্রশ্ন: কতদিনে সনদ পাব?
উত্তর: সাধারণত ৭–১০ দিন, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সময় বাড়তে পারে।
প্রশ্ন: অনলাইনে ফি কীভাবে দিব?
উত্তর: বিকাশ, নগদ, রকেট, বা ব্যাংক পেমেন্টের মাধ্যমে।