জমি কেনা-বেচা কিংবা কোনো প্রয়োজনে জমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আপনি যদি জমি কিনতে যান, তাহলে যার কাছ থেকে কিনছেন তিনি আসল মালিক কিনা তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। আগে এই কাজটি করতে ভূমি অফিসে ঘুরতে হতো, কিন্তু এখন technology এর কল্যাণে এটি আপনি ঘরে বসে, শুধু আপনার মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার দিয়েই করে ফেলতে পারেন।
এই আর্টিকেলে, আমরা step by step শিখবো কিভাবে দাগ নম্বর বা খতিয়ান নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করতে হয়।
যেসব তথ্য আগে থেকে জানা প্রয়োজন
জমির মালিকানা যাচাই করতে আপনার নিম্নলিখিত তথ্যগুলো জানা থাকতে হবে:
- জমিটি কোন জেলা ও উপজেলা/থানা তে অবস্থিত।
- জমিটির মৌজা এর নাম।
- খতিয়ান নম্বর অথবা দাগ নম্বর।
সচেতন হোন, সুরক্ষিত হোন: মোবাইলেই যাচাই করুন জমির মালিকানা
জমি কেনা-বেচা বাংলাদেশের একটি বড় ও জটিল বিনিয়োগ। এর সাথে জড়িয়ে থাকে জীবন savings, পারিবারিক legacy এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কিন্তু অজ্ঞতা বা অসাধু ব্যক্তির ফাঁদে পড়ে অনেকেই প্রতারিত হন, financial এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এমন পরিস্থিতি এড়াতে আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো সচেতনতা।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, আপনার জানা উচিত যে এখন আপনি সরকারি এই সেবার মাধ্যমে ঘরে বসে, শুধুমাত্র আপনার স্মার্টফোন দিয়েই জমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করতে পারেন। এটি আপনার মৌলিক অধিকার, এবং এই জ্ঞান আপনাকে প্রতারণার হাত থেকে সুরক্ষা দেবে।
এই আর্টিকেলে, আমরা step by step শিখবো কিভাবে দাগ নম্বর বা খতিয়ান নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করতে হয়।
কেন এই যাচাই করা জরুরি?
- প্রতারনা রোধ: নিশ্চিত হোন যে, যার কাছ থেকে জমি কিনছেন তিনি আসল মালিক।
- দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি কমায়: মালিকানা নিয়ে কোনো dispute থাকলে আগেভাগেই জানতে পারবেন।
- সময় ও অর্থের সাশ্রয়: ভূমি অফিসে ঘোরাঘুরির প্রয়োজন কমে যায়।
- স্বচ্ছতা: ডিজিটাল পদ্ধতি transparency বাড়ায় এবং দুর্নীতি রোধে সহায়ক।
যেসব তথ্য আগে থেকে জানা প্রয়োজন
জমির মালিকানা যাচাই করতে আপনার নিম্নলিখিত তথ্যগুলো জানা থাকতে হবে:
- জমিটি কোন জেলা ও উপজেলা/থানা তে অবস্থিত।
- জমিটির মৌজা এর নাম।
- খতিয়ান নম্বর অথবা দাগ নম্বর।
যেভাবে যাচাই করবেন জমির মালিকানা
পুরো প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের সরকারি ভূমি সেবা (land.gov.bd) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। নিচের steps গুলো care
জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম
পুরো প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের সরকারি ভূমি সেবা (land.gov.bd) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
ধাপ ১: ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

- আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের যেকোনো ব্রাউজার (Chrome, Firefox ইত্যাদি) খুলুন।
- এড্রেস বারে টাইপ করুন: land.gov.bd
- এন্টার দিলে আপনি “ভূমি সেবা” এর মূল পেজে চলে আসবেন।
ধাপ ২: ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ অপশনে ক্লিক করুন

- ওয়েবসাইটের হোমপেজে গেলেই আপনি বিভিন্ন সেবার তালিকা দেখতে পাবেন।
- “ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ” অপশনটিতে ক্লিক করুন।
- এটি ক্লিক করলে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন পেজে redirect হবেন।
ধাপ ৩: নামজারি খতিয়ান অপশন সিলেক্ট করুন

- নতুন পেজে কয়েকটি অপশন পাবেন: সার্ভে খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মৌজা ম্যাপ ইত্যাদি।
- জমির বর্তমান মালিকানা যাচাইয়ের জন্য “নামজারি খতিয়ান” অপশনটি সিলেক্ট করুন।
ধাপ ৪: অবস্থানগত তথ্য নির্বাচন করুন

- বিভাগ নির্বাচন করুন।
- জেলা নির্বাচন করুন।
- উপজেলা/থানা নির্বাচন করুন।
- তারপর মৌজা নির্বাচন করুন।
ধাপ ৫: খতিয়ান নম্বর দিয়ে সার্চ করুন

- মৌজা সিলেক্ট করলেই সেই মৌজার সকল জমির মালিকের তালিকা আসবে।
- আপনার কাছে যদি খতিয়ান নম্বর থাকে, সেটি লিখে “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করুন।
- খতিয়ান নম্বর না থাকলে মালিকের নাম দিয়ে খুঁজতে পারবেন।
ধাপ ৬: মালিকানা তথ্য দেখুন

- খতিয়ান নম্বর দিয়ে সার্চ দিলে সংশ্লিষ্ট রেকর্ড আসবে।
- ডাবল ক্লিক করলে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেখতে পারবেন:
- জমির মালিকের নাম
- খতিয়ান নম্বর
- দাগ নম্বর
- জমির পরিমাণ
- মৌজা নম্বর
দাগ নাম্বার দিয়ে অথবা মালিকের নাম লিখে জমির মালিকানা অনুসন্ধান করা যায়

ভূমি সেবা (land.gov.bd) দিয়ে আর কী কী করা যায়?
- মিউটেশন (খাজনা রেকর্ডে নাম তোলা) করার আবেদন।
- ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ।
- খতিয়ানের কপি সংগ্রহ।
- ইজারা বন্দোবস্তের জন্য আবেদন।
সতর্কতা ও পরামর্শ
জমির লেনদেন একটি জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়। অনলাইনে যাচাই করার পরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে রেকর্ডটি ফিজিক্যালি যাচাই করা উচিত। পাশাপাশি একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ।
আশা করি এই গাইডটি অনুসরণ করে আপনি সহজেই জমির মালিকানা যাচাই করতে সক্ষম হবেন।
জমির মালিকানা যাচাইয়ের সাথে সম্পর্কিত তথ্য
- সঠিক মৌজা নির্বাচন করুন – ভুল মৌজা নির্বাচন করলে খতিয়ান বা দাগ নম্বর মিলবে না। তাই জমির সঠিক মৌজা জানা জরুরি।
- পুরাতন খতিয়ান সংরক্ষণ করুন – অনেক সময় নতুন রেকর্ডে তথ্য না মিললেও পুরাতন খতিয়ান সাহায্য করতে পারে।
- মালিকের নাম বানান খেয়াল করুন – অনেক সময় নামের বানান ভুল থাকলে সার্চে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন বানানে খুঁজে দেখতে পারেন।
- খাজনা পরিশোধ যাচাই করুন – জমির মালিকানা যাচাইয়ের পাশাপাশি খাজনা নিয়মিত দেওয়া হয়েছে কিনা তা land.gov.bd থেকে দেখে নিন।
- জমির উপর মামলা আছে কিনা যাচাই করুন – জমি কেনার আগে কোর্টে কোনো মামলা চলছে কিনা সেটিও যাচাই করা জরুরি।
- অন্য কারো নামে রেকর্ড আছে কিনা দেখুন – কখনও কখনও মূল মালিকের বদলে অন্য কারো নামে রেকর্ড থাকতে পারে। এমন ক্ষেত্রে আইনজীবীর সহায়তা নিন।
- নামজারি সম্পন্ন হয়েছে কিনা নিশ্চিত হোন – জমি কেনা বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার পর নামজারি না করলে ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়তে পারেন।
- জমির ম্যাপ দেখে নিন – শুধু খতিয়ান নয়, জমির মৌজা ম্যাপও ডাউনলোড করে দেখুন। এতে জমির সীমানা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে।
- ভুয়া খতিয়ান থেকে সাবধান – অনেক সময় ভুয়া বা জাল খতিয়ান ব্যবহার করে জমি বিক্রি করা হয়। তাই অনলাইন কপিকে অফিস থেকে যাচাই করুন।
- ভূমি অফিস থেকে সত্যায়িত কপি নিন – অনলাইনে দেখা তথ্য প্রাথমিকভাবে কাজে লাগলেও, অফিস থেকে সত্যায়িত কপি নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
- অভিজ্ঞ লোকের সাহায্য নিন – জমির মালিকানা যাচাই করতে গেলে অভিজ্ঞ কোনো লোক বা সার্ভেয়ারের সাহায্য নিতে পারেন।
- আইনজীবীর পরামর্শ নিন – বড় অঙ্কের জমি কেনা-বেচার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন।



