জাতীয়তা সনদ কি?
জাতীয়তা সনদ হলো এমন একটি সরকারি ডকুমেন্ট, যা প্রমাণ করে আপনি বাংলাদেশের একজন বৈধ নাগরিক এবং কোন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম বা শহরে আপনার স্থায়ী বসবাস রয়েছে। এটি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রদান করা হয়।
এই সনদ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ব্যবহার হয়, যেমন:
- পাসপোর্ট বানানো
- জমির কাগজপত্র
- চাকরির আবেদনে
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ইত্যাদি।
জাতীয়তা সনদ ও নাগরিক সনদ কি এক?
অনেকেই মনে করেন জাতীয়তা সনদ আর নাগরিক সনদ এক জিনিস। বাস্তবে, এটি প্রায় একই ধরনের সনদ যেখানে একজন ব্যক্তির পরিচয় ও বসবাসের স্থান উল্লেখ থাকে। ইউনিয়ন বা পৌরসভা ভেদে একে ভিন্ন নামে ডাকা হয় – কখনো “জাতীয়তা সনদ”, কখনো “নাগরিকত্ব সনদ”।
জাতীয়তা সনদে কী কী তথ্য থাকে?
জাতীয়তা সনদে নিচের তথ্যগুলো সাধারণত উল্লেখ থাকে:
- আপনার নাম
- পিতার নাম
- মাতার নাম
- জন্ম তারিখ
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
- আপনি কোন দেশে, জেলার, উপজেলার, ইউনিয়নের, ওয়ার্ডের ও গ্রামের বাসিন্দা
- স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা
- চেয়ারম্যান/মেয়রের স্বাক্ষর ও সিল
জাতীয়তা সনদের প্রয়োজনীয়তা
জাতীয়তা সনদ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে, যেমন:
- সরকারি বা বেসরকারি চাকরি
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি
- ভিসা ও পাসপোর্টের জন্য আবেদন
- এনজিও বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সদস্য হওয়ার জন্য
জাতীয়তা সনদ অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম
জাতীয়তা সনদ এখন ঘরে বসেই অনলাইনে মোবাইল বা কম্পিউটারে আবেদন করে পাওয়া সম্ভব। নিচে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হলো।
ধাপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ
আপনাকে যেতে হবে ➤ www.prottayon.gov.bd ওয়েবসাইটে।
ধাপ ২: নাগরিক একাউন্ট তৈরি
১. আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, NID (জাতীয় পরিচয়পত্র), জন্ম তারিখ ব্যবহার করে একটি নাগরিক একাউন্ট খুলুন।
২. একাউন্ট খুলে লগইন করুন।
আরও পডুনঃ
নাগরিক একাউন্ট তৈরি করার নিয়ম
ধাপ ৩: আবেদন ফর্ম পূরণ
১. জাতীয়তা সনদ নির্বাচন করুন।
২. নিজের তথ্য পূরণ করুন
যেমন:
নাম, পিতা/মাতার নাম
ঠিকানা (বর্তমান ও স্থায়ী)
জন্ম তারিখ
এনআইডি নম্বর ইত্যাদি
ধাপ ৪: তথ্য যাচাই ও সংশোধন
এখানে আপনার সব তথ্য দেখা যাবে যেমন:
নাম, পিতার নাম, মাতার নাম
বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি।
সব তথ্য সঠিক হলে: “সব ঠিক আছে” বাটনে ক্লিক করুন।
যদি পরিবর্তন করতে চান: তাহলে “পরিবর্তন” অপশন ব্যবহার করুন।
ধাপ ৫: ভাষা নির্বাচন ও পেমেন্ট
১. সনদ আপনি কোন ভাষায় চান তা নির্বাচন করুন:
শুধুমাত্র বাংলা: ১৫ টাকা
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষা: ৩১ টাকা
২. পেমেন্ট অপশন: বিকাশ, নগদ, রকেট অথবা ব্যাংকিং।
৩. ঠিকানার ধরণ ও অফিস নির্বাচন করুন (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন)।
ধাপ ৬: আবেদন আইডি সংগ্রহ ও জমা
১. পেমেন্ট সফল হলে আপনাকে একটি আবেদন আইডি দেখানো হবে।
২. এটি সংরক্ষণ করুন।
৩. এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, জমির দলিল (যদি প্রযোজ্য হয়)) সহ নির্বাচিত অফিসে (ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন জমা দিন।
জাতীয়তা সনদ ইংরেজি অনুবাদ প্রয়োজন হলে করণীয়
বিদেশে ব্যবহারের জন্য যদি জাতীয়তা সনদ ইংরেজিতে প্রয়োজন হয়, তাহলে নোটারি পাবলিক বা সিটি কর্পোরেশনে অনুবাদ ও সত্যায়ন করিয়ে নিতে হবে।
জাতীয়তা সনদ ডাউনলোড বা যাচাই
সনদ রেডি হলে আপনি SMS বা ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পাবেন। চাইলে www.prottayon.gov.bd থেকে আবেদন আইডি দিয়ে যাচাই বা প্রিন্ট করতে পারবেন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আমি নিজে ২০২৪ সালে জাতীয়তা সনদের জন্য অনলাইনে আবেদন করি। শুরুতে নাগরিক একাউন্ট খোলার সময় কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম, কিন্তু সঠিকভাবে নির্দেশনা অনুসরণ করলে খুব সহজেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ৭-৮ দিনের মধ্যে ডাকযোগে আমি আমার সনদ হাতে পাই।