পারিবারিক সনদ অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনে একটি ডকুমেন্ট যা আমাদের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি এবং বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক প্রয়োজন হয়।
আমরা এই সনদটি কিভাবে সহজে অনলাইনে আবেদন করে পেতে পারি, তা আমরা অনেকেই জানি না। পারিবারিক সনদ এখন অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে খুব সহজে গ্রহণ করা যায়।
পারিবারিক সনদপত্র একটি সরকারি সনদ যা পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এটি নানা কাজে লাগে যেমন ওয়ারিশ সনদ, পেনশন, ব্যাংক লেনদেন, পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ, স্কুলে ভর্তি, বা বিদেশে ভ্রমণের সময়।
পারিবারিক সনদপত্র কোথায় পাবেন?
আপনি স্থানীয় প্রশাসন অফিস থেকে পারিবারিক সনদ সংগ্রহ করতে পারেন:
উপজেলা পরিষদ
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অফিস
পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিস
তবে বর্তমানে এটি অনলাইনেও পাওয়া যায়, যা অনেক সহজ ও সময় বাঁচায়।
পারিবারিক সনদ কোথায় প্রয়োজন হয়?
ওয়ারিশ সনদ
পেনশন আবেদন
ব্যাংক বা আর্থিক লেনদেন
জমিজমার কাগজপত্র
স্কুল-কলেজে ভর্তি
বিদেশ ভ্রমণের অনুমোদন
পারিবারিক সনদ করতে কি কি কাগজপত্র লাগে
আপনার ছবি
ভোটার আইডি কার্ড
পিতা-মাতার নাম
বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা
পরিবারের সদস্যদের তথ্য
অনলাইনে পারিবারিক সনদ আবেদন করার নিয়ম
১. প্রথম ধাপ: prottoyon.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
২. প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুন: আপনার নাম, ঠিকানা, পরিবারের সদস্যদের তথ্য দিন এবং ছবি ও ভোটার আইডি আপলোড করুন।
৩. সেবা নির্বাচন করুন: সেবার তালিকা থেকে ‘পারিবারিক সনদ’ নির্বাচন করুন।
৪. ফি প্রদান: 15 টাকা ফি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দিন।
৫. আবেদন সাবমিট করুন: সব তথ্য যাচাই করে সাবমিট করুন।
অনলাইনে পারিবারিক সনদ আবেদন করার ধাপসমূহ
চলুন আমরা জেনে নিই কিভাবে অনলাইনে পারিবারিক সনদের জন্য আবেদন করবেন। প্রতিটি ধাপে আপনাকে সহজভাবে বোঝানো হবে- কোন ধাপে কী করবেন এবং সম্পূর্ণ প্রসেসটি কীভাবে সম্পন্ন হবে:
ধাপ ১: নাগরিক একাউন্ট তৈরি করুন

প্রথমেই আপনাকে prottoyon.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি নাগরিক একাউন্ট খুলতে হবে।
একাউন্ট খোলার সময় নিচের তথ্যগুলো সঠিকভাবে দিতে হবে:
নাম
পিতার নাম
ঠিকানা
ছবি
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর
একাউন্ট খোলার পর সেটি ১০০% সম্পূর্ণ করতে হবে, তারপর আপনি আবেদন করতে পারবেন।
টিপ: রও পড়ুনঃ নাগরিক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও ধাপসমূহ ২০২৫
ধাপ ২: প্রত্যয়ন ওয়েবসাইটে লগইন করুন

এখন prottoyon.gov.bd ওয়েবসাইটে লগইন করুন।
লগইনের জন্য:
যে মোবাইল নম্বর দিয়ে নাগরিক প্রোফাইল তৈরি করেছিলেন, সেটি ব্যবহার করুন।
প্রোফাইল তৈরি করার সময় আপনার মোবাইলে যে OTP (ওটিপি) এসেছিল, সেটিই পাসওয়ার্ড হিসেবে কাজ করবে।
এই মোবাইল নম্বর ও ওটিপি দিয়ে সহজেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন।
ধাপ ৩: ড্যাশবোর্ড থেকে পারিবারিক সনদ নির্বাচন করুন

লগইন করার পর প্রথমে ড্যাশবোর্ড অপশনে ক্লিক করুন।
সেবা সমূহ থেকে পারিবারিক সনদ বেছে নিন।
এখানে আবেদন করার আগে কী কী তথ্য প্রয়োজন, তার তালিকা দেখতে পাবেন (যেমন: আবেদনকারীর তথ্য, পরিবারের সদস্যদের তথ্য, পরিচয়পত্র নম্বর ইত্যাদি)।
সব তথ্য ঠিক থাকলে আবেদন বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪: আবেদন করুন

এই ধাপে “আবেদন করুন” অপশনে ক্লিক করুন। আপনার পারিবারিক সনদের জন্য যেসব তথ্য প্রয়োজন, তার একটি তালিকা দেখানো হবে — ভালো করে পড়ে তারপর আবেদন করুন অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫: আবেদনকারীর তথ্য যাচাই

এই ধাপে আবেদনকারীর তথ্য অটোমেটিক পূরণ করা হয়ে যাবে। আপনি শুধু তথ্যগুলো ভালো করে দেখে নিশ্চিত করুন, সব ঠিক থাকলে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যান।
ধাপ ৬: পরিবারের সদস্যদের তথ্য দিন

এই ধাপে পরিবারের সদস্যদের তথ্য দিতে হবে। যেমন:
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর / জন্ম নিবন্ধন নম্বর
জন্ম তারিখ
পরিবারের সাথে সম্পর্ক
মোবাইল নম্বর
যদি নতুন সদস্যের তথ্য যোগ করতে চান, “আরও যোগ করুন” অপশনে ক্লিক করুন। সব তথ্য আবশ্যকভাবে পূরণ করতে হবে। সব ঠিকমতো পূরণ হলে “জমা দিন” অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৭: আবেদনকারী ও পরিবারের সদস্য তথ্য যাচাই

এই ধাপে আবেদনকারী এবং পরিবারের সদস্যদের সব তথ্য একসাথে দেখা যাবে।
যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে “জমা দিন” অপশনে ক্লিক করুন।
আর যদি কোনো তথ্য ভুল থাকে, তাহলে “পরিবর্তন” অপশনে ক্লিক করে তা ঠিক করে নিন।
ধাপ ৮: তথ্য হালনাগাদ

এই অপশনে আপনার তথ্য হালনাগাদ দেখানো হবে — যেমন: নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি।
যদি সব তথ্য সঠিক থাকে, তাহলে “সব ঠিক আছে” অপশনে ক্লিক করুন।
আর যদি কোনো তথ্য পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে “পরিবর্তন” অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৯: পেমেন্ট ও ভাষা নির্বাচন
এই ধাপে পারিবারিক সনদের জন্য অনলাইনে পেমেন্ট করতে হবে এবং ভাষা নির্বাচন করতে হবে। আপনি কোন ভাষায় সনদটি নিতে চান, তা ঠিক করুন — যেমন বাংলা বা ইংরেজি।

যদি দুটি ভাষা (বাংলা ও ইংরেজি) নির্বাচন করেন, খরচ হবে ৩১ টাকা।
যদি শুধু এক ভাষা নির্বাচন করেন, খরচ হবে ১৫ টাকা।
পেমেন্ট করতে পারবেন বিকাশ, নগদ, রকেট বা ব্যাংকিং পদ্ধতিতে।
এরপর আপনাকে ঠিকানার ধরণ এবং অফিস নির্বাচন করতে হবে।
ধাপ ১০: আবেদন আইডি সংরক্ষণ ও জমা
অনলাইনে পেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর আপনার আবেদন আইডি দেখানো হবে।
আবেদন আইডিটি অবশ্যই সংরক্ষণ করে রাখুন।
এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যেমন: পরিচয়পত্র, ছবি, সম্পর্ক প্রমাণ ইত্যাদি) হাতে নিয়ে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আমি নিজেও সম্প্রতি আমার পরিবারের জন্য অনলাইনে পারিবারিক সনদ আবেদন করেছি। শুরুতে কিছুটা জটিল মনে হলেও ধাপে ধাপে এগিয়ে গেলে কাজটা বেশ সহজ হয়ে যায়।
বিশেষ করে নাগরিক প্রোফাইল তৈরি, সঠিক তথ্য দেওয়া আর পেমেন্টের পর আবেদন আইডি সংরক্ষণ করা — এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমি আবেদন করার ৫ দিনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ পেয়ে গেছি। তাই বলবো, ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ধৈর্য ধরে ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
শেষ কথা
অনলাইনে পারিবারিক সনদ আবেদন এখন অনেক সহজ হয়েছে। আপনি যদি সঠিক তথ্য দেন আর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন, তাহলে বাসায় বসেই সহজে সনদটি পেয়ে যাবেন। সরকারি কাজের গতি বৃদ্ধি ও নাগরিক সেবার মানোন্নয়নে এটি বড় পদক্ষেপ।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. অনলাইনে পারিবারিক সনদ করতে কতদিন সময় লাগে?
সাধারণত ৫-৭ কার্যদিবসের মধ্যে সনদ হাতে পাওয়া যায়।
২. আবেদন করতে কি কাগজপত্র লাগবে?
জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, পরিবারের সদস্যদের তথ্য, ছবি, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি।
৩. অনলাইনে পেমেন্ট কিভাবে করবো?
বিকাশ, নগদ, রকেট বা ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন।




আমি ২০ আর ২১ জুলাই আবেদন করেছিলাম, আমার আবেদনটি উপস্থাপিত দেখাছে, আমার করণীয় কি?