দেনমোহর কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
দেনমোহর মুসলিম বিবাহের একটি আবশ্যিক অংশ, যা স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদার প্রতীক। এটি শুধু একটি ধর্মীয় প্রথা নয়, বরং একটি আইনি বাধ্যবাধকতাও বটে। ইসলামী শরিয়তে এটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের আইনেও এর স্বীকৃতি রয়েছে।
দেনমোহর মূলত দুই ধরনের হতে পারে
- সুনির্দিষ্ট দেনমোহর (Specific Dower): কাবিননামায় নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ থাকে।
- অনির্দিষ্ট বা উপযুক্ত দেনমোহর (Proper Dower): কাবিননামায় কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ না থাকলে স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা ও স্বামীর আর্থিক সামর্থ্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
সুনির্দিষ্ট দেনমোহর আবার দুই প্রকারে ভাগ করা যায়:
- তাৎক্ষণিক দেনমোহর (Prompt Dower): বিবাহের সময় তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধযোগ্য অংশ।
- বকেয়া দেনমোহর (Deferred Dower): যেটি পরবর্তীতে পরিশোধের জন্য নির্ধারিত হয়।
বকেয়া দেনমোহর পরিশোধের পদ্ধতি
অনেক সময় স্বামী বিবাহের পর স্ত্রীকে বকেয়া দেনমোহর পরিশোধ করতে চান। এ ধরনের পরিশোধ যদি যথাযথভাবে প্রমাণিত না থাকে, তবে ভবিষ্যতে স্ত্রীর অস্বীকার করার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
বকেয়া দেনমোহর পরিশোধে সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো হলফনামার মাধ্যমে পরিশোধ করা। এটি একটি বৈধ ও নিরাপদ উপায়, যা আপনাকে ভবিষ্যতের জটিলতা থেকে রক্ষা করবে।
হলফনামা (Affidavit) বা চুক্তিপত্রের মাধ্যমে পরিশোধের ধাপসমূহ
1. ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা প্রস্তুত করুন:
পরিশোধের পরিমাণ, তারিখ এবং পদ্ধতি (যেমন নগদ, মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংক চেক ইত্যাদি) বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করুন।
2. নোটারি পাবলিক দ্বারা স্বাক্ষর ও সনদীকরণ করুন:
হলফনামাটি একজন অভিজ্ঞ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে স্বাক্ষর ও সনদীকরণ করা আবশ্যক। এটি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে আইনি গ্রহণযোগ্যতা পায়।
3. প্রমাণ সংরক্ষণ করুন:
পরিশোধের রশিদ, ব্যাংক ট্রান্সফার স্লিপ বা মোবাইল পেমেন্ট রেকর্ড সংযুক্ত রাখুন।
হলফনামার একটি কপি নিজে রাখুন এবং একটি কপি স্ত্রীর কাছে প্রদান করুন।
কেন হলফনামা এত গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমানে সম্পর্ক ভালো থাকলেও ভবিষ্যতে যদি সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং স্ত্রী বকেয়া দেনমোহর গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন, তখন এই হলফনামাটি একটি শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে।
এটি:
- আদালতে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ।
- স্বামীর অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা প্রমাণ করে।
- ভবিষ্যতে প্রতারণার আশঙ্কা দূর করে।
- স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে।
পরিশেষে
স্ত্রীর বকেয়া দেনমোহর পরিশোধ শুধু একটি ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, এটি একটি আইনি দায়িত্বও বটে। তাই এই দায়িত্ব পালন করার সময় অবশ্যই আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি নথিভুক্ত হলফনামা বা দেনমোহর চুক্তিপত্র আপনাকে ও আপনার স্ত্রীকে উভয়কেই সুরক্ষিত রাখবে।
পরামর্শ:
একটি সঠিক ও বৈধ হলফনামা তৈরি করতে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া সর্বদা উত্তম।
প্রাসঙ্গিক FAQ (প্রশ্নোত্তর):
১. বকেয়া দেনমোহর কী?
বকেয়া দেনমোহর হলো বিবাহের সময় নির্ধারিত হলেও পরবর্তীতে পরিশোধের জন্য বাকি রাখা হয় এমন দেনমোহর।
২. কিভাবে বকেয়া দেনমোহর পরিশোধ করা যায়?
হলফনামার মাধ্যমে পরিশোধ করাই সবচেয়ে নিরাপদ ও আইনি পদ্ধতি।
৩. হলফনামা তৈরি করতে কী কী লাগে?
৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, দেনমোহরের বিবরণ, স্বাক্ষর ও নোটারি পাবলিকের সত্যায়ন।
৪. কি হলে হলফনামা আইনি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়?
যদি এটি নোটারি পাবলিক দ্বারা সনদীকৃত হয় এবং স্বামী-স্ত্রীর স্বাক্ষর থাকে।
৫. কি কারণে বকেয়া দেনমোহর পরিশোধের প্রমাণ রাখা জরুরি?
ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা বা অস্বীকার এড়াতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক প্রমাণ।