বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনি কী জানেন আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে? বাংলাদেশ সরকার আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত অসচ্ছল ও প্রান্তিক জনগণের জন্য “আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০” প্রণয়ন করেছে, যার আওতায় নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির মানুষ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আইনি সাহায্য পেতে পারেন।
এই লেখাটিতে আপনি জানতে পারবেন:
- কে কে এই সুবিধা পেতে পারেন
- কোথায় গেলে এই সেবা পাওয়া যায়
- কী ধরনের আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়
- এবং কীভাবে আবেদন করবেন
চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০: সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ অনুসারে, বাংলাদেশে বসবাসরত নির্দিষ্ট শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিরা মামলা সংক্রান্ত সকল ধরণের আইনি সেবা বিনামূল্যে গ্রহণ করতে পারেন। এটি একটি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, যার বাস্তবায়নে কাজ করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (NLASO)।
কারা কারা বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাবেন?
অসচ্ছল ব্যক্তি – যারা মামলার ব্যয়ভার বহনে অক্ষম
নারী ও শিশু – বিশেষত নির্যাতনের শিকার
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি – শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী
৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে অসচ্ছল বৃদ্ধ
কারাবন্দী আসামী – যাদের নিজস্ব আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্য নেই
আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগণ – যারা সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী
মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি ও নির্যাতিত ব্যক্তি
স্বীকৃত শরণার্থী
বিনামূল্যে আইনি সহায়তা কোথায় পাওয়া যাবে?
সরকারি পর্যায়ে:
- জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (NLASO) – nlaso.gov.bd
- জেলা লিগ্যাল এইড অফিস
- উপজেলা লিগ্যাল এইড অফিস
- আদালতের লিগ্যাল এইড সহায়তা ডেক্স
বেসরকারি পর্যায়ে (NGO):
- আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK)
- বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (BLAST)
- জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (BNWLA)
- ব্র্যাক লিগ্যাল এইড সার্ভিস
কি ধরনের আইনি সেবা প্রদান করা হয়?
আইনগত পরামর্শ
মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ
আপস মীমাংসা বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি
আবেদনপত্র ও মামলা প্রস্তুতি
আপিল ও রিভিশন মামলা পরিচালনা
কীভাবে আবেদন করবেন?
অনলাইন আবেদন:
- ওয়েবসাইট: nlaso.gov.bd
- আবেদন ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে।
সরাসরি অফিসে আবেদন:
জেলা/উপজেলা লিগ্যাল এইড অফিসে গিয়ে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করুন
টেলিফোন হেল্পলাইন:
১৬৪৩০ নম্বরে কল করে তাৎক্ষণিক পরামর্শ নিন।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- জাতীয় পরিচয়পত্র / জন্মসনদ
- দারিদ্র্যের প্রমাণপত্র (যেমন: ইউপি চেয়ারম্যানের সুপারিশপত্র)
- মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র
- যদি নির্যাতনের শিকার হন, তার প্রমাণ
আপনার আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে যদি প্রমাণ হয় আপনি সহায়তার উপযুক্ত, তাহলে সরকার নির্ধারিত আইনজীবী দ্বারা আপনাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে ন্যায়বিচারের অধিকার দিয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে কেউ যেন ন্যায় থেকে বঞ্চিত না হন, সেটি নিশ্চিত করতেই এই আইনি সহায়তা আইন প্রণীত হয়েছে। আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ যদি উপরের তালিকার যোগ্যতার আওতাভুক্ত হন, তবে দেরি না করে এখনই আবেদন করুন।
জানুন, সচেতন হোন এবং অন্যদেরও জানাতে সাহায্য করুন।