বার্ষিক আয় হলো একজন ব্যক্তি বা পরিবারের নির্দিষ্ট এক বছরে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্জিত মোট আয়ের হিসাব। এই আয়ের ভিত্তিতে অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি সহায়তা, ভাতা বা পাসপোর্ট আবেদনসহ নানা ক্ষেত্রে বার্ষিক আয়ের সনদ বা প্রত্যয়ন পত্র চাওয়া হয়ে থাকে।
আপনি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজে নিজেই অনলাইনে বার্ষিক আয়ের সনদের জন্য আবেদন করতে পারেন হাতে থেকে মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার ব্যবহার করে।
আজকে আমরা জানব:
- বাৎসরিক আয়ের সনদ কী
- বাৎসরিক আয়ের প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম
- অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম
- কী কী ডকুমেন্ট লাগে
- আবেদন ফি ও সময়সীমা
- সনদ কোথা থেকে পাওয়া যায়
- পিতার বা ভাইয়ের বাৎসরিক আয়ের সনদ কিভাবে পাওয়া যাবে
বার্ষিক আয় বলতে কি বুঝায়?
বার্ষিক আয় (Annual Income) বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা অভিভাবকের বার্ষিক সময়কালে (একটি পূর্ণ অর্থবছরে) সব উৎস থেকে অর্জিত মোট আয়। যেমন:
- চাকরি থেকে বেতন
- ব্যবসার লাভ
- জমি বা ঘর ভাড়া
- বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স
- কৃষি আয় ইত্যাদি।
বাৎসরিক আয়ের সনদ কী?
বাৎসরিক আয়ের সনদ (Annual Income Certificate) হলো একটি সরকার অনুমোদিত লিখিত সনদ, যা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা অভিভাবকের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ উল্লেখ করে প্রদান করা হয়। সাধারণত এই সনদ অনলাইনে আবেদন করে আপনি প্রয়োজনে ডকুমেন্ট ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন জমা দিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় সনট কি হাতে পেতে পারেন।
কোথা থেকে বাৎসরিক আয়ের সনদ পাওয়া যায়?
বাৎসরিক আয়ের সনদ আপনি নিচের অফিসগুলো থেকে পেতে পারেন:
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ
পৌরসভা অফিস
সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস
কিছু জায়গায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়
অনলাইনে বাৎসরিক বা বার্ষিক আয়ের সনদ কিভাবে পাওয়া যায়?
আপনি এখন ঘরে বসেই মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে অনলাইনে বাৎসরিক আয়ের সনদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বার্ষিক আয়ের সনদ পেতে যা যা লাগে:
জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন
পাসপোর্ট সাইজ ছবি
পরিবারের আয় সংক্রান্ত তথ্য
যদি পিতার বা ভাইয়ের বাৎসরিক আয় প্রয়োজন হয়, তাদের পরিচয়পত্র ও তথ্য
ক্ষেত্র বিশেষে জমির খতিয়ান বা অন্যান্য আয় প্রমাণপত্র
বার্ষিক আয়ের প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম

পিতার বা ভাইয়ের বাৎসরিক আয়ের সনদ কিভাবে পাওয়া যাবে?
আপনি যদি আপনার পিতার বা ভাইয়ের জন্য বাৎসরিক আয়ের সনদ পেতে চান, তাহলে আপনাকে তাদের পরিচয়পত্র, ছবি এবং আয়ের উৎস ও আনুমানিক হিসাব দিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনে সম্পর্ক প্রমাণের জন্য আপনার জন্ম নিবন্ধন বা ভোটার আইডিও লাগতে পারে।
অনলাইনে বার্ষিক আয়ের সনদ আবেদন করার নিয়ম
আপনি একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে আপনি নিজে নিজে এখন ঘরে বসেই মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে অনলাইনে বাৎসরিক আয়ের সনদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ধাপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে প্রবেশ করুন ➤ www.prottayon.gov.bd ওয়েবসাইটে।
ধাপ ২: নাগরিক একাউন্ট তৈরি
১. আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, NID (জাতীয় পরিচয়পত্র), জন্ম তারিখ ব্যবহার করে নাগরিক একাউন্ট তৈরি করুন।
২. একাউন্ট তৈরি করার পর লগইন করুন।
ধাপ ৩: আবেদন ফর্ম পূরণ
১. “বাৎসরিক আয়ের সনদ” সেবাটি নির্বাচন করুন।
২. আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, আয়ের উৎস ও পরিমাণ লিখুন।
৩. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (NID, ছবি ইত্যাদি) স্ক্যান করে আপলোড করুন।
ধাপ ৪: তথ্য যাচাই ও সংশোধন
আপনার সকল তথ্য একবার যাচাই করুন। সঠিক হলে “সব ঠিক আছে” ক্লিক করুন, ভুল থাকলে “পরিবর্তন” অপশন ব্যবহার করুন।
ধাপ ৫: ভাষা নির্বাচন ও পেমেন্ট
১. আপনি সনদটি বাংলায় নেবেন না ইংরেজি অনুবাদসহ, তা নির্বাচন করুন:
শুধু বাংলা: ১৫ টাকা
বাংলা ও ইংরেজি: ৩১ টাকা
২. পেমেন্ট বিকাশ, নগদ, রকেট অথবা ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করুন।
৩. আপনার এলাকার ইউনিয়ন/পৌরসভা অফিস নির্বাচন করুন।
ধাপ ৬: আবেদন আইডি সংগ্রহ ও জমা
বিদেশে আবেদন, ভিসা বা স্কলারশিপের জন্য বাৎসরিক আয়ের সনদের ইংরেজি অনুবাদ প্রয়োজন হলে, সেটি নোটারি পাবলিক বা সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে অনুবাদ ও সত্যায়িত করে নিতে হবে।
ইংরেজি অনুবাদ প্রয়োজন হলে করণীয়
বিদেশে আবেদন, ভিসা বা স্কলারশিপের জন্য বাৎসরিক আয়ের সনদের ইংরেজি অনুবাদ প্রয়োজন হলে, সেটি নোটারি পাবলিক বা সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে অনুবাদ ও সত্যায়িত করে নিতে হবে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আমি নিজে ২০২৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে অনলাইনে বাৎসরিক আয়ের সনদের জন্য আবেদন করি। পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ এবং নির্ভরযোগ্য ছিল। মাত্র ৪ কার্যদিবসে আমি ডাকযোগে আমার সনদ হাতে পাই।
শেষ কথা
বাৎসরিক আয়ের সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়নপত্র যা অনেক সরকারি ও বেসরকারি কাজে দরকার হয়। আপনি এখন ঘরে বসে সহজেই অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। যেকোনো তথ্য ভুল থাকলে সংশোধন করুন এবং সঠিকভাবে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
FAQ
বাৎসরিক আয় বলতে কী বুঝায়?
উত্তর: বাৎসরিক আয় বলতে বোঝানো হয় একজন ব্যক্তি বা পরিবারের এক বছরে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্জিত মোট অর্থনৈতিক আয়। যেমন: চাকরি, ব্যবসা, কৃষিকাজ, বাড়িভাড়া ইত্যাদি।
বার্ষিক নতুন আইডি এই আছে আয়ের সনদ কী?
উত্তর: এটি একটি সরকারি প্রত্যয়ন পত্র, যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ও উৎস উল্লেখ থাকে এবং এটি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে ইস্যু করা হয়।
অনলাইনে বাৎসরিক আয়ের সনদ পাওয়া যায় কি?
উত্তর: হ্যাঁ, অনেক ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে আবেদন করে সনদ পাওয়া যায়।
অনলাইনে আবেদন করতে কত টাকা লাগে?
উত্তর: সাধারণত ফি ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন বা পৌরসভার নির্ধারিত ফি অনুযায়ী হয়।