বর্তমানে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট পেতে আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় না। আপনি এখন ঘরে বসেই কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত দেখাব ই-পাসপোর্ট কী, কীভাবে আবেদন করবেন, কত ফি লাগবে, কত দিনে পাবেন এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ই-পাসপোর্ট কী এবং কেন দরকার?
ই-পাসপোর্ট (Electronic Passport) হলো একটি আধুনিক বায়োমেট্রিক ডকুমেন্ট যা আপনার পরিচয় সংরক্ষণ করে একটি ইলেকট্রনিক চিপে। এটি ব্যবহার করে আপনি দ্রুত, নিরাপদ ও স্মার্টভাবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করতে পারবেন।
ই-পাসপোর্ট আবেদন করার ধাপসমূহ
১. অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে যান https://www.epassport.gov.bd এই অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।
২. এলাকা যাচাই
আপনার জেলার পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু আছে কিনা তা চেক করুন। প্রায় সব জেলায় এই সেবা চালু রয়েছে।
৩. আবেদন ফর্ম পূরণ
- Google Chrome ব্যবহার করুন
- ‘Apply Online’ ক্লিক করুন
- বাংলাদেশ থেকে আবেদন করলে “Yes” সিলেক্ট থাকবে
- বিদেশ থেকে করলে “No” সিলেক্ট করে দেশ ও দূতাবাস সিলেক্ট করুন
৪. ঠিকানা ও থানার তথ্য
আপনার বর্তমান ঠিকানা, জেলা ও থানা নির্বাচন করুন। সিস্টেম নিজেই নিকটবর্তী অফিস দেখাবে।
৫. ইমেইল দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলুন
- নতুন ইমেইল ব্যবহার করুন
- ‘I’m Human’ সিলেক্ট করে Continue করুন
৬. পাসওয়ার্ড সেট করুন
পাসওয়ার্ডে থাকতে হবে:
- কমপক্ষে ৬ অক্ষর
- বড় অক্ষর, ছোট অক্ষর, সংখ্যা ও স্পেশাল ক্যারেক্টার
- যেমন:
Shamim#2025
৭. ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ
- Given Name: নামের প্রথম অংশ
- Surname: শেষ অংশ
- মোবাইল নম্বর দিন
- ‘I’m Human’ চেক করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন
৮. ইমেইল ভেরিফিকেশন
ইমেইলে পাঠানো লিংকে ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভ করুন।
৯. ফি পরিশোধ
নির্বাচিত পাসপোর্ট টাইপ ও ডেলিভারি টাইপ অনুযায়ী ফি প্রদান করুন।
১০. বায়োমেট্রিক ও পুলিশ ভেরিফিকেশন
- নির্ধারিত তারিখে অফিসে গিয়ে ছবি, আঙুলের ছাপ ও স্বাক্ষর দিন
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে
ই-পাসপোর্ট ফি ও ডেলিভারি টাইপ
টাইপ | মেয়াদ | ডেলিভারি টাইম | ফি (BDT) |
---|---|---|---|
48 পেইজ | ৫ বছর | রেগুলার (১৫-২১ দিন) | ৪,০২৫ টাকা |
48 পেইজ | ৫ বছর | এক্সপ্রেস (৭-১০ দিন) | ৬,৩২৫ টাকা |
48 পেইজ | ৫ বছর | সুপার এক্সপ্রেস (২ দিন) | ৮,৬২৫ টাকা |
ই-পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- জন্ম সনদ (যদি থাকে)
- পুরাতন পাসপোর্ট (রি-ইস্যু হলে)
- ঠিকানা প্রমাণ (ইউটিলিটি বিল)
- ছবি ও সঠিকভাবে পূরণ করা আবেদন ফর্ম
অনলাইন আবেদন ট্র্যাক করার নিয়ম
আবেদন করার পর আপনি একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি পাবেন। সেটি ব্যবহার করে আপনি ওয়েবসাইটে লগইন করে দেখতে পারবেন:
- আবেদন স্ট্যাটাস
- পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে কিনা
- পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়েছে কিনা
গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- মোবাইলেও আবেদন করা যায়, তবে কম্পিউটার ব্যবহার করাই ভালো
- তথ্য ভুল দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে
- সব ডকুমেন্ট আগে থেকে প্রস্তুত রাখুন
- কোনো দালালের সাহায্য ছাড়াই আবেদন করুন
FAQ – প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
ই-পাসপোর্ট কিভাবে পাবো?
epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন ফর্ম পূরণ করে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে আবেদন করতে হবে।
ই-পাসপোর্ট কত দিনে ডেলিভারি হয়?
রেগুলার: ১৫-২১ দিন, এক্সপ্রেস: ৭-১০ দিন, সুপার এক্সপ্রেস: ২ দিন।
ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে কত টাকা লাগে?
নিম্নে সর্বনিম্ন ৪,০২৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৮,৬২৫ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
আবেদন করার পর কিভাবে চেক করবো?
আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডি ব্যবহার করে অনলাইনেই ট্র্যাক করা যাবে।
শেষ কথা:
বর্তমানে ২০২৫ সালে এসে ই-পাসপোর্ট পেতে কোনো দালাল বা মিডিয়ার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এটি একটি সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ অনলাইন প্রক্রিয়া, যা আপনি নিজেই করতে পারেন।